মোঃ সেলিম মিয়া স্বাধীন ৭১।।
মেহেরপুরের নাজমুল ইসলাম। সৌদি আরবে থাকা ভাই ডিটলকে নিতে এসেছেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। গাড়ি নিয়ে আসা নাজমুল ড্রাইভারের সঙ্গে বিমানবন্দরের বহুতল পার্কিংয়ের কাছে স্থাপিত ওয়েটিং লাউঞ্জে বসে গল্প করছিলেন। বাইরে প্রচণ্ড রোদ থেকে সুশীতল স্থানে বসে অনেকটাই খোশ মেজাজে আলাপচারিতায় মাতেন তারা।
সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতেই নাজমুল বলে ওঠেন, ‘শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুটি লাউঞ্জের কথা ফেসবুকে দেখেছি। তখন মনে মনে ভেবেছিলাম, ঈদের সময় ভাই আসবে। আমি বিমানবন্দরের বাইরে না থেকে ওয়েটিং লাউঞ্জে বসবো। খুব ভালো লাগছে। বিমানবন্দরে এ ধরনের ব্যবস্থা থাকায় আমিসহ এখানে যারা এসেছেন সবাই খুশি। বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য লাউঞ্জ অনন্য উদ্যোগ।’
শুধু নাজমুলই নন, কাতার প্রবাসী লক্ষ্মীপুরের নাজিম ওই লাউঞ্জে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। কথা হয় তার সঙ্গেও। তিনি বলেন, ‘আমার ফ্লাইট সন্ধ্যা ৭টায়। ১০টার দিকে বিমানবন্দরে এসেছি। এত সময় বাইরে থাকতে অনেক কষ্ট। এ কারণে এখানে এসে বিশ্রাম নিচ্ছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে নাজিম বলেন, ‘বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য লাউঞ্জের ব্যবস্থা খুব ভালো হয়েছে। এখানে আমরা বিশ্রাম নিতে পারি, অনেকে ঘুমাচ্ছেন। খাবারও খাওয়া যায়। এই ব্যবস্থা করার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ।’
গত বছরের ১১ নভেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উদ্বোধন হয় দুটি লাউঞ্জ। এর একটি প্রবাসীদের জন্য নির্মিত বিশেষায়িত ‘প্রবাসী লাউঞ্জ’। অন্যটি ‘ওয়েটিং লাউঞ্জ’, যেটি তৈরি করা হয়েছে যাত্রী ও অপেক্ষমান স্বজনদের জন্য। এরপর থেকে প্রবাসীরা বিমানবন্দরে বিশ্রাম, খাওয়া ও নামাজ পড়ার সুবিধা পাচ্ছেন। লাউঞ্জে নারীদের জন্যও বিশ্রাম এবং নামাজের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সরেজমিন ওয়েটিং লাউঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বাইরে যাওয়া এবং প্রবাস থেকে আসা যাত্রী ও স্বজনরা কেউ বসে আছেন আবার কেউ ঘুমাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার নামাজও পড়ছেন। বাইরের প্রচন্ড রোদ থেকে রক্ষা পেতে সুশিতল স্থানে বসে অনেকে গল্পেও মেতেছেন।
ভাইকে নিতে এসে অপেক্ষা করছেন হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘এই লাউঞ্জ হাজার হাজার প্রবাসীর উপকার করছে। বাইরে প্রচন্ড রোদ, রোদ থেকে রক্ষা পেতে আমরা এখানে বসে আছি। এছাড়াও অনেকের সঙ্গে ছোট শিশুরাও আছে।’
এদিকে প্রবাসীদের জন্য লাউঞ্জেই খাবারের দোকানের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। যেখানে বিএমইটি কার্ডধারী কর্মীরা কম মূল্যে খাবার কিনে খেতে পারেন।
প্রবাসী লাউঞ্জে খাবারের দোকানকর্মী আলামিন বলেন, ‘এখানে যে সব খাবার রয়েছে বিএমইটি কার্ডধারী কর্মীরা ৩০ শতাংশ কম মূল্যে নিতে পারেন। বার্গার, শর্মা, চা, কফিসহ সফট ড্রিঙ্কস রয়েছে। প্রত্যেকটিতে প্রবাসীদের জন্য ছাড় আছে।’
সুপার ভাইজার বিউটি বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ১ হাজার প্রবাসী সেবা নিচ্ছেন। তবে এটি কখনও কখনও আরও বেড়ে যায়। কম মূল্যে খাবার পাওয়া, রেস্ট নেওয়া সব মিলিয়ে প্রবাসীরা আমাদের এখানে এসে অনেক উপভোগ করেন।’
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা ফ্লাইট থেকে নেমে যেন কোনও ধরনের বিড়ম্বনার শিকার না হন, সে জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা লাউঞ্জ স্থাপন করেছি তাদের বাড়তি সুবিধার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘একজন প্রবাসী বিমানবন্দরে নেমে কিংবা বাইরে যাওয়ার জন্য এসে এখানে বিশ্রাম নিতে পারছেন, খেতে পারছেন, নামাজ কিংবা অন্যান্য কাজও সারতে পারছেন। এটাই লাউঞ্জের সুবিধা।’
তিনি বলেন, ‘নারীদের জন্যও আমাদের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। নারী-পুরুষ উভয় রেমিট্যান্স যোদ্ধা আমাদের এই সুবিধা নিতে পারছেন। এছাড়াও প্রবাসীদের জন্য শাটল বাসসহ আরও কিছু সুবিধা রয়েছে।