ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ধরলা পাড়ে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবী"

  • আপলোড তারিখঃ 02-04-2025 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 17634 জন
ধরলা পাড়ে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবী" ছবির ক্যাপশন: স্বাধীন ৭১
LaraTemplate

ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ধরলা পাড়ে হাজারও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়


ফুলবাড়ীতে কোন প্রকার বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় ঈদের আনন্দ ও উৎসব উপভোগ করতে ধরলা সেতুটি বেছে নিয়েছে দর্শনার্থীরা।



ঈদের দিন দুপুর থেকে দুর দুরন্তর থেকে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয়জনদের নিয়ে উৎসব পালন করতে দেখা গেছে। ঔ দিন বিকালের পর থেকে ধরলা সেতুর পাড়ে আনন্দ উৎসব উপভোগ করতে সেতুর পাড়ে মানুষের আনাগোনা দ্বিগুণ হারে বাড়তে থাকে। 


সন্ধ্যার আগেই ক্রমান্বয়ে দেখা গেছে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। একই ভাবে ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনেও সেতু পাড়ে লোক সমাগম দেখা গেছে।


এ উপজেলায় বিনোদন পার্ক না থাকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ধরলা সেতুর দুই পাড়ে অত্যন্ত উৎসব মুখর পরিবেশে হাজার হাজার দর্শনার্থীদের ঢলে মুখরিত। অনেকেই আবার এসেছেন ধরলা সেতুটি এক নজর দেখতে।



কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী এলাকায় সেতুটি অবস্থিত। উপজেলা সদর থেকে সেতুর দূরত্ব মাত্র ৩ কিলোমিটার। ঈদে প্রিয়জনদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে ছুটে আসেন ধরলা সেতুর পাড়ে। ধরলা পাড়েই খানিকটা বিনোদন ও ভাল লাগার অনুভূতি পেতে হাজারো মানুষের ঢল নামে।


সেতুর দুই পাড় দিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরীরা পরিবার পরিজন নিয়ে পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ভ্যান, রিকশা, অটো, মোটর সাইকেল, বাইসাইকেল, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে সেতুর মাঝ খানে দাঁড়িয়ে প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার পরিজনদের সঙ্গে ছবি ও সেলফি তুলতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।


আবার অনেকেই ধরলায় ডিঙি নৌকায় চড়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করছেন। কেউ কেউ আবার ধরলার চর গুলিতেই প্রিয়জনদের সাথে ঘুরে ঘুরে দেখছেন।


সেতুর দুই পাড়ে ফুচকা, চানাচুর, আইসক্রিম, চুরি-ফিতা ও বেলুনসহ বিভিন্ন রকমারীর শতাধিক দোকান বসেছে। সবগুলো দোকানেই তেক্রাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। ধরলা পাড়ে দর্শনার্থীরা সেতুর পাড়ে শিশু বিনোদন কেন্দ্রের দাবি জানিয়েছেন।


গংগাহাট এলাকার থেকে আসা শাহিনুর রহমান শাহিন, কবির মামুদ এলাকার জাহাঙ্গীর আলমসহ সেতুপাড়ের স্থানীয়  জানান, এই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ছিল ফুলবাড়ী ধরলা সেতুটি। ফুলবাড়ীবাসীর স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।


সেতুর উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়া ও ধরলায় ডিঙি নৌকা করে প্রিয়জনরা আপন মনে ঘরছেন। কোনো কোনো দর্শনার্থী বাঁধে বসেই গল্প ও আড্ডায় ব্যস্ত সময় পাড় করেন। তারা আরও জানান সেতু পাড়ে পর্যটন কেন্দ্রের পাশাপাশি সেতুর দুই পাড়ে ধরলার তীররক্ষা বাঁধের দুই পাশে সিমেন্টের বেঞ্চসহ জাতীয় কিছু বসার ব্যবস্থা করলে চটপটি ও ফুচকা ওয়ালাদের আগমনে দর্শক সমাগম বাড়তো।


বর্তমানে সেতুটির উপর দিয়ে চলাচল ছাড়াও এখানে প্রতিদিন বিকালে অর্ধ দর্শনার্থী দূরদূরান্ত থেকে এসে ভীর জমায়। বিশেষ করে সন্ধ্যার গোধূলি বেলায় সূর্যকে অস্ত যাওয়ার দৃশ্যটা মুগ্ধ করে তুলবে দুর-দুরান্তের দর্শনার্থীসহ এলাকাবাসীর। এ যেন প্রকৃতির এক সৌন্দর্য অনুভবের জায়গা।


ঘুরতে দর্শনার্থী অসীম, বুবলী ও পলাশ জানান, ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ধরলা পাড়ে এসেছি। অনেক ভালো লাগছে অনেক। এখানে সুন্দর লোকেশনে ভাল ভালো ছবি ও সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করছি। সেই সাথে ধরলায় স্পিডবোট ও ডিঙি নৌকায় ঘুরেছি। সব মিলিয়ে আমরা এবারের ঈদ-আনন্দটা খুবই ভাল হয়েছে।


ঘুরতে আশা সেতুর বাজারের চা বিক্রেতা আশেক রহমান ও ফাস্টফুড বিক্রেতা মালেকুর রহমান জানান, সেতুর পাড়ে শিশু বিনোদন কেন্দ্র হলে এই এলাকাটি আরও উন্নয়ন ঘটবে। দুই ঈদে আমরা ভালোই বিক্রি করে থাকি। সেতু পাড়ে এলাকায় খুবই ভালো।


 সরকারের অনেক খাস জমি পরে আছে। সেই জমিগুলো একটি বিনোদন কেন্দ্র করা যায়। সেক্ষেত্রে সরকারের রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি এই এরাকার অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে জানান এই দুই ব্যবসায়ী। 


লালমনিরহাটের বড়বাড়ী এলাকা থেকে আসা ফুসকা ও চানাচুর বিক্রেতা সঞ্জিত সেন বলেন,  ঈদের দিন বিকাল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত ৪ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি করেছি। গত মঙ্গলবার  ঈদের দ্বিতীয় দিন বিকাল ৩ টায় এসে এ পর্যন্ত ১ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত আজ যেহেতু কালকের চেয়ে লোক সমাগম কম তাই  কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বিক্রি হতে পারে। এই বিক্রেতা আরও জানান প্রতি ঈদের সময় এখানে আসা হয়। এখানে যদি একটা বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা গেলে প্রতি দিনেই মানুষের সমাগম হলে আমাদের বিক্রি ভালো হতো।


ফুলবাড়ী সদরের চন্দ্রখানা এলাকা থেকে আসা আঁখের রস বিক্রেতা ইব্রাহিম জানান, এখানে শুধু দুই ঈদে মানুষের উপচে পড়া ভিড় হয়। দুই -তিন এখানে বেচা বিক্রি ভালো হয়। ঈদের দিন হাজার ৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। আজ ঈদের দ্বিতীয় দিন বিকাল চারটা পর্যন্ত দেড় হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। সন্ধ্যায় বিক্রি বাড়বে। তিনিও  ধরলা পাড়ে একটি বিনোদন কেন্দ্রের দাবী জানিয়েছেন। 


ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুনুর রশিদ জানান, ঈদের দিন দূরদূরান্তর থেকে আসা হাজারও দর্শনার্থী ধরলা সেতু পাড়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যাপক জনসমাগম ঘটেছে। দর্শনার্থীরা যেন আপন মনে সেতু পাড়ে তাদের প্রিয়জনদের সাথে ঘুরতে পাড়ে সে লক্ষ্যে সেতুর দুই পাড়ে পুলিশের টহল জোড়দার করা হয়েছে। ঈদের দিন দর্শনার্থীরা দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেতু পাড়ে নির্বিঘ্নে ঈদের আনন্দ উৎসব করেছে।


দর্শনার্থীরা বাড়িতে না যাওয়া পর্যন্ত পুলিশ সেতুর দুই পাড়ে অবস্থা করেন। মঙ্গলবার ঈদের দ্বিতীয় দিন সেতু পাড়ে লোক সমাগম কম হলেও রাত ৮ টা পর্যন্ত পুলিশ সেতুর দুই পাড়ে দায়িত্ব পালন করেছে বলে জানান ওসি।


উল্লেখ্য, ফুলবাড়ী ধরলা সেতুটি প্রায় ১৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯ টি স্প্যান বিশিষ্ট ৯৫০ মিটার পিসি গার্ডারের কাজ সম্পন্ন করে এলজিইডি। গত ২০১৮ সালের ৩ জুন রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটির শুভ উদ্বোধন করেন। উদ্ধোধনের পর থেকে সর্ব সাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ মোঃ সেলিম মিয়া

সর্বশেষ সংবাদ
notebook

নরসিংদীর শিবপুরে মাছ বাজার পরিদর্শন করলেন স্যানিটারি ইন্সপেক্টর