(🥢এস এম মনিরুজ্জামান আকাশ)
বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি(বিসিডিএস) ফৈলজানা শাখা, চাটমোহর, পাবনার আনন্দ ভ্রমণ উপলক্ষে আমরা বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সদস্য, অতিথি সহ বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫) বিকেল পাঁচটার সময় আটঘড়িয়া উপজেলার গোড়ড়ী বাজার থেকে আসর নামাজ আদায় করে একটা বড় বাসে (৩৫ জন সদস্য অতিথিসহ) মোট ৩৭ জন চেপে বসি। আল্লাহর রহমত-বরকতে রওয়ানা হই এবং চলনবিলের দক্ষিণ পাড় চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের বোয়াইলমাড়ী মসজিদে মাগরিব আদায় করে আবারও রওয়ানা হই। পথিমধ্যে টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে এশার নামাজ (কসর) ও রাতের খাবারের বিরতিতে নামাজ শেষ করে খানা খেয়ে বাসে চেপে বসি।
যথারীতি বাস চলতে থাকে গাজীপুর, নায়ায়নগঞ্জ, ফেনী হয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম জগন্নাথদিঘী শাহী মসজিদ চত্ত্বরে গিয়ে থামে। যথারীতি ফজর সালাত আদায় করে আবারও রওয়ানা হই। খাগড়াছড়ি শহরে গিয়ে শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারী) সকাল সাড়ে এগারোটার সময় পৌঁছাই। সাজেক ভ্যালি পৌঁছানোর জন্য দুইটা চাঁদের গাড়ী ভাড়া করে ৩৬ নং সাজেক ভ্যালিতে (রুইলুই পাড়া) দুপর আড়াইটার দিকে পৌঁছে জোহর (ক্বাজা) নামাজ আদায় করি। দুপুরের খাবার খেয়ে ক্লান্ত শরীরে রাত্রি যাপনের জন্য রিসোর্ট বা আবাসিক হোটেলে সীট/রুম খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে যাই। আসরের নামাজ (কসর) আদায় করে সুর্যাস্ত দেখতে সকলেই সাজেক ভ্যালি মসজিদের পাশে দাঁড়াই। সুর্যাস্ত দেখতে দেখতে উপভোগ করি এক নৈসর্গিক দৃশ্য মন ও হৃদয় ছুঁয়ে খোদা তায়া’লার সৃষ্টি অপার সৌন্দর্য মন্ডিত আভায়।
রাতে কোথাও থাকার ব্যবস্থা না হওয়ার একপর্যায়ে সাজেক ভ্যালিতে আবাসিক ঘর ভাড়া দেওয়া সমিতির কর্তাদের নজরে বিষয়টি আসার পর তারা আন্তরিকতার সাথে আমাদেরকে বিভিন্ন বাসায় বাসায় রাতে অবস্থানের(ঘুমানোর) ব্যবস্থা করে দেন। রাতে আমার সঙ্গে আঠারো জনের কংলাক পাহাড়ে থাকার সৌভাগ্য হয়। কংলাক পাহাড় হলো সাজেক ভ্যালির সবচেয়ে উচ্চতর পাহাড়। রাতে আমি(প্রভাষক এস এম মনিরুজ্জামান আকাশ) ও আমার সঙ্গে মোঃ জিন্দার আলী, মাওঃ আব্দুর রশিদ, কামরুল হাসান মাস্টার, হাফিজুর রহমান, আমিরুল ইসলাম রিপন, অসীম সরকার, সবুজ শেখ,আমিনুল ইসলাম শিপন,মোঃ সবুজ আলী সহ আমরা রাতে "লালতনা পাংকুয়া" আপার বাসায় অবস্থান করি। "লালুনা পাংকুয়া" আপার বাসায় এশা আদায় করে রাত বারোটায় ঘুমিয়ে পড়ি। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারী)সকালে ফজর নামাজ আদায় করে কংলাক পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সুর্যোদয় ও মিষ্টি সকালে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করি।
আপার বাসায় চা বিস্কিট খেয়ে চলে আসি মন টানা রেস্টুরেন্টে নাস্তা খেয়ে চাঁদের গাড়ীতে চড়ে বসি।সাড়ে এগারোটার দিকে গাড়ী ছাড়ে খাগড়াছড়ি বাসটার্মিনালে এসে পৌঁছায় দুপুর দুইটার সময়। শান্তিনগর জামে মসজিদে গিয়ে গোসল করে জোহরের নামাজ(কসর) আদায় করি। বিসিডিএস ফৈলজানা শাখার সভাপতি এম মুনসুর উদ্দিন আহমেদ এর নেতৃত্বে পুরাতন ভাতের হোটেলে দুপরের খাবার খেয়ে ঝুলন্ত সেতু পরিদর্শন করে সাড়ে তিনটায় বাসে উঠি সকলেই। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশ করে আসরের নামাজ (কসর) আদায় করে বিভিন্ন স্থান গুলো পরিদর্শন করি ও গুহা পরিদর্শন করে মাগরীব নামাজ আদায় শেষে আলুটিলা থেকে বের হয়ে বাসে চেপে বসি সকলেই। খাগড়াছড়ি শহরে রাত আটটার সময় পৌঁছে সোয়া আটটায় বাস টার্মিনালের ইবাদত খানায় সালাতুল এশা (কসর) আদায় করে বিসমিল্লাহ হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্টে রাতে খাবার খেয়ে যথারীতি বাসে চেপে সকলেই আবারও রওয়ানা হই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও মহেশখালী ভ্রমনের উদ্দেশ্যে। সারারাত বাস চলতে চলতে রবিবার (৯ফেব্রুয়ারী) ভোর ছয়টার সময় কলাতলী কক্সবাজার পৌঁছে! আমরা ফজরের নামাজ আদায় করে বাসের ভিতরে একটু বিশ্রাম করি, আবার কেউ কেউ সাগর পাড়ে ঘুরতে যায়। সকলেই সকাল সাড়ে আটটার সময় প্রেসিডেন্ট বীচ ভিউ রিসোর্টে গিয়ে ব্যাগ পত্র রেখে (রুবেল ভাত ঘর-এ) নাস্তা খেয়ে বিশ্রাম করি। সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে হোটেল থেকে বের হয়ে লাবণী সী বীচে গিয়ে সাঁতার কাটি, ফুলবল খেলি, নূড়ী ও পাথর কুড়াই! দুপর দুইটার দিকে হোটেলে ফিরে গোসল সেরে জোহর (কসর) আদায় করে দুপর আড়াই টার সনয় রুবেল ভাত ঘরে গিয়ে সামুদ্রিক মাছ(বিভিন্ন পদের) দিয়ে ভুঁড়ি ভোজ সেরে রুমে ঢুকে টানা ঘুম দেই। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে হিমছড়ি রওয়ানা হই ও সেখানে পৌঁছে বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদে আসর নামাজ আদায় করে ঝর্ণা সহ নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ সহ সুর্যাস্ত অবলোকন করি ও পার্কের ভেতরে মাগরিবের সালাত আদায় করি।
হোটেলে ফিরে আসি এশার নামাজ (কসর)আদায় করে জ্বর ও ব্যাথায় আক্রান্ত হয়ে শুয়ে পড়ি। সফর সঙ্গীরা বার্মিজ মার্কেট সহ বিভিন্ন মার্কেটে কেনাকাটা করতে যায়।
সোমবার (১০ফেব্রুয়ারী) সকালে ফজর নামাজ আদায় করে রুবেল ভাত ঘরে নাস্তা খেয়ে সকলেই রওয়ানা হই মহেশখালীর উদ্দেশ্যে। আমাদের বাস টার্মিনালে (বানিজ্য মেলার পাশে)রেখে ছয় নং ঘাট থেকে স্পীড বোটে উঠে সকাল এগারোটায় মহেশখালী ভ্রমনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই চারা স্পীড বোটে। পৌঁছানোর পরে ইজিবাইক ভাড়া করে শ্যুটিং স্পর্ট, শ্রী শ্রী আদিনাথ মন্দির, শুকটি খোলা, স্বর্ণ মন্দির, পরিদর্শন করে শুকটি মাছ হরেক পদে কেনা ও যাচাই বাছাই করে দেখা সহ উপভোগ্য সময় পার করে সাগর পাড় জামে মসজিদে জোহরের নামাজ (কসর) আদায় করে স্পীড বোটে চড়ে কক্সবাজার ফিরে আসি টার্মিনালে দুপর সোয়া তিনটার সময় ও গোসল করে দুপুরের খাবার খেয়ে বাসে রেস্ট নেই। আসর এর নামাজ টার্মিনালের ওয়াক্তিয়া মসজিদে আদায় করি বাস ছেড়ে দেয়। বাস চলতে চলতে থেমে যায় পথিমধ্যে মাগরিব নামাজ আদায় করি। মাগরীবের নামাজ আদায় করে উঠে পড়ি বাসে। আবারও শুরু হয় চলা গন্তব্য মাওয়া ফেরিঘাট। পথিমধ্যে এশার নামাজের জন্য চা পানের বিরতিতে নেমে পড়ি (সাতকানিয়ায়) মৌলভীর দোকান জামে মসজিদে রাত সাড়ে আটটায় এশার নামাজ(কসর) আদায় করে ঝাল মুড়ি খেয়ে আবারও চেপে বসি বাসে। সারা রাত চলতে থাকে বাস মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারী) ভোর সাড়ে পাঁচটার সময় মাওয়া ফেরিঘাটে পৌঁছে। আমরা মাওয়া ফেরিঘাট নতুন মসজিদে ফজর নামাজ আদায় করে হাটতে যাই লঞ্চ ঘাটে। এদিকে মুনসুর উদ্দিন আহমেদ, সুজাউদ্দিন আহমেদ, স্বপন নন্দী(প্রধান শিক্ষক- বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়,পাবনা), অসীমসরকার, সাইদুল ইসলাম, সঞ্জয় দা, তন্ময় মামু সহ সফরের দিকনির্দেশকেরা বসুমতী বাংলা হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্টে ইলিশ মাছ কিনে রান্না করতে দেয়। রান্না কমপ্লিট হয়ে গেলে পৌনে সাতটার দিকে সকলেই খেতে বসি! আত্মতৃপ্তি সহকারে ভূড়ি ভোজ শেষে, পছন্দ সই বড় সাইজের ইলিশ মাছ কিনে নিয়ে আসি বাড়ীর উদ্দেশ্যে। সকাল সাড়ে সাত টায় রওয়ানা হই পদ্মাসেতু ভ্রমণ করতে। সেতু পার হয়ে ভাঙ্গা ফ্লাইওভার পরিদর্শন করে রাজবাড়ী হয়ে কুষ্টিয়া গড়াই পরিদর্শন করে লালন শাহ সেতু পার হয়ে দাশুড়িয়া মোড় থেকে অনুজবর সৈনিক মাসুম(মরহুম শাহজাহান চেয়ারম্যানের মেঝো ছেলে) কে আমাদের বাসে তুলে নেই। এরপর টেবুনিয়া (পাবনা) এসে নেমে ফলফলাদি কিনি পছন্দ ও সাধ্য সমেত। অনেকেই দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার আবার কাপড়-চোপড় কিনি।
বাসে এসে আটঘড়িয়া কড়ইতলা থামে হাফিজুর রহমান (আম্মা ফার্মেসী) সেখানে নামে। আমরা সকলেই গোড়ড়ী বাজারে নামি। কেউ কেউ সালাতুল জোহর (শেষ কসর) আদায় করে, আমরা ফৈলজানা হাইস্কুল মসজিদে সালাতুল জোহর (শেষ কসর) আদায় করি। সকলেই সকলের সাথে ও মাছরাঙ্গা বাসের ড্রাইভার ও হেলপারের সাথে সৌহাদ্যতা বিনিময় করে যার যার বাড়ীতে ফিরে আসি।
আল্লাহর দরবারে লক্ষ কোটি শুকরিয়া ফৈলজানা বিসিডিএস এর আনন্দ ভ্রমণ সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করে বাড়ীতে সহীহ সালামতে ফিরে আসার জন্য......
(তারিখঃ ১১-০২-২০২৫)
🎤✒️প্রভাষক এস এম মনিরুজ্জামান আকাশ
কবি-কলামিস্ট, সাংবাদিক-গবেষক, পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মী,
সভাপতি-
গ্রিনপিস বাংলা, পাবনা জেলা শাখা পাবনা।
kdaakash2024pabna@gmail.com