ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ভারতীয় উপমহাদেশের জ্ঞানতাপস প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ ও কিছু কথা

  • আপলোড তারিখঃ 07-09-2024 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 381484 জন
ভারতীয় উপমহাদেশের জ্ঞানতাপস প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ ও কিছু কথা ছবির ক্যাপশন: স্বাধীন ৭১
LaraTemplate

পহেলা সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ ঈশায়ী এইদিনে আলোকিত ভূঞাপুরের রূপকার প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ স্যার সরকারি কলেজ -এর প্রতিষ্ঠাতা মহান এই মানুষটি জন্য পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার নিকট তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।



যে শহরের রাস্তায় দশটি বিজলী বাতি জ্বলে, আমি আর দশটি বিজলী বাতি নিয়ে সেখানে যাইনি । আমি বাতি নিয়ে গিয়েছি জোনাকীদের সহযোগিতায় আধা আধাঁর পথে। সরকারী শহরের সরকারী ভাগ্যবানদের জ্ঞানোজ্জ্বল দুয়ারে আর পাঁচটা মশাল জ্বালাতে যাইনি। আমি গিয়েছি ছোট্ট ছোট্ট চাটি হাতে নিয়ে বেসরকারী পল্লীর বেসরকারী দরিদ্রদের অন্দর মহলে । তাই আমার সাহিত্য অঙ্গনে বেশীর ভাগ স্থান দখল করে আছে ধোপা, নাপিত,জেলে-জেলেনী, বেদে-বেদেনী, কৃষান-কৃষানী,দফতরী, দিনমজুর,সাপুড়ে, লাঠিয়াল,পেয়াদা,ফকিন্নী, ডাকাত, খুনী, বারবানিতা।


এ জুতাহীন অতিথিরা আমার দুয়ারে তাদের পায়ের ধূঁলি রেখে যায়,  অনায়াসে আমি তা আমার ঘরে অমূল্য সঞ্চয় রুপে তুলে রাখি” —ইবরাহীম খাঁ ।


উপমহাদেশের প্রখ্যাত  শিক্ষাবিদ, জ্ঞানতাপস, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ স্যারের  ১২৯তম জন্মবার্ষিকী ১লা সেপ্টেম্বর। 


তিনি ১৮৯৪  সালের ০১ সেপ্টেম্বর টাংগাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার অন্তর্গত বিরামদি (বর্তমানে শাহবাজ নগর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। 


১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স ও এমএ পাশ করেন এবং ১৯২৩ সালে আইনে বিএল ডিগ্রী নেন। করটিয়ার জমিদার ওয়াজেদ আলী খাঁন পন্নী( চাঁন মিয়া) সাহেবের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা ও ইবরাহীম খাঁর ঐকান্তিক চেষ্টায় করটিয়ার বুকে ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় করটিয়া সাদত কলেজ এবং প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল হিসাবে তিনি একটানা ২২ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তদানিন্তন সময়ে করটিয়া সাদত কলেজ বাংলার আলীগড় হিসাবে যশ খ্যাতি ও পরিচিত পায়।


অবিভক্ত বাংলা ও আসামে সাদত কলেজই মুসলমানদের প্রতিষ্ঠিত প্রথম কলেজ এবং ইবরাহীম খাঁ যিনি প্রথম মুসলমান প্রিন্সিপাল ১৯৭৮ সালের ২৯  মার্চ তিনি পরলোকগমন করেন। 


তিনি ১৯৪৮ সাল হতে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান, বাংলা একাডেমির অন্যতম উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী ও ১৯৪৮ সালে ভূঞাপুর কলেজ (বর্তমানে ইবরাহীম খাঁ সরকারি কলেজ) প্রতিষ্ঠা করেন।এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি  ও অন্যতম পরিচালক ছিলেন। তিনিই সর্বপ্রথম কৃষকদের মাঝে ঋন বিতরনের জন্য পার্লামেন্টে বিল উত্থাপন করেন।


১৯৪৮ সালে ঢাকায় টাঙ্গাইল মাহফিল (বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলা সমিতি) প্রতিষ্ঠা করেন ও প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি হিসাবে সুচারুরূপে দায়িত্ব পালন করেন।ভূঞাঁপুর পাইলট বালক উচ্চ বিদ্যালয়, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ভূঞাঁপুর আলিয়া মাদ্রাসা ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা, চক্ষু হাসপাতালসহ অসংখ্য শিক্ষামুলক প্রতিষ্ঠান ও সেবা মুলক প্রতিষ্ঠা করেন। 


১৯৭৭ সনে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদক" প্রদান করন।  ১৯৭৫ সালে বাংলা একাডেমী কর্তৃক জাতীয় সংবর্ধনা, ১৯৭৭ সালে কায়কোবাদ সাহিত্য মজলিশ হতে গণ সংবর্ধনা এবং ২০১৫ সালে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে  জাতীয় ভাবে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন কমিটি কতৃর্ক মরণোত্তর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক সম্মাননা দেওয়া হয়।


প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ও প্রাপ্ত খেতাব "তমাঘায়ে কায়েদে আজম" উপাধী ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পত্রিকায় বিবৃতি দানের মাধ্যমে বর্জন করেন। ১৯৩৮ সালে ইবরাহীম খাঁ "খান বাহাদুর" উপাধি পান, তিনি ঘৃনা ভরে  পরাধীন দেশে বসবাস করে দেশপ্রেমের টানে এই খেতাব গ্রহন করেননি এবং ১৯৪৩ সালে দৃঢ়কণ্ঠে তা বর্জন করেন।


সম্প্রতি প্রকাশিত বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" তে কৃতজ্ঞচিত্তে শ্রদ্ধাভরে স্যার প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁকে স্মরণ করেছেন।


 প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ রচিত উল্লেখযোগ্য কয়োকটি গ্রন্থ হচ্ছে বাতায়ন, ইস্তান্বুল যাত্রীর পত্র, মানুষ, পাখির বিদায়, রাসূলের দেশে (বর্তমানে বাংলাদেশে স্কুলপাঠ্য), কাফেলা, নসর পেয়াদা, বৌ বেগম, লিপি সংলাপ,  কামাল পাশা, আনোয়ার পাশা, ঋণ পরিশোধ, আলু বোখারা, গল্পে ফজলুল হক,ইসলাম সোপান, ইসলামের মর্মকথা, খালেদার সমর স্মৃতি, শাহনামা,গল্প দাদুর আসর, ছোটদের মিলাদুন্নবী।


A peep into Rebel Poet, To my students, Anecdotes from Islam, Gleanings in golden fields. এরমধ্যে Anecdotes from Islam ইন্দোনেশিয়ায় স্কুল পাঠ্য এবং মালায় ও ইন্দোনেশীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে।        


প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ ফাউন্ডেশন ও  ইবরাহীম খাঁর আলোকিত ভূঁঞা পুরের উদ্যোগে তাঁর জন্মস্থান টাঙ্গাইলের ভূঁঞাপুরে ‘ইবরাহীম খাঁর’ কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি  জ্ঞাপন ও মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদিনই দেশবিদেশের হাজার সাহিত্য প্রেমি জ্ঞান পিপাসু তার কবর জিয়ারত করেন এবং পরম করুনাময়ের কাছে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা দোওয়া  করেন। আমি নগন্য একজন সাহিত্য কর্মী হিসেবে জ্ঞানতাপস স্যার প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ-র বিদেহী আত্মা চির প্রশান্তি কামনা করছি আমিন।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ মোঃ রিপন আহমেদ

সর্বশেষ সংবাদ
notebook

নরসিংদীর শিবপুরে মাছ বাজার পরিদর্শন করলেন স্যানিটারি ইন্সপেক্টর